নন্দনতত্ত্বের আরেক নাম সৌন্দর্যদর্শন। সভ্যতার আদিলগ্ন থেকে মানুষ অনুকরণ, কল্পনা ও প্রকাশের সামর্থ দিয়ে শিল্পচর্চার ধারাকে অব্যাহত রেখেছে। ঐ শিল্প শাস্ত্রের সহগামী হিসেবেই সুন্দরের দর্শন বিকশিত হয়েছে। বিশ্বের বহিঃপ্রকৃতিতে বিরাজমান লীলা থেকে শিল্পমনীষী যে অন্তরের রসায়নে সৌন্দর্য সৃজন করেন; তারই সূত্র ধরে শিল্পরসিক, শিল্পী, সমজদারের নিকট সৌন্দর্যতত্ত্বের অপরিহার্যতা। বস্তুত সৌন্দর্যদর্শন শিল্পচর্চার ফলশ্রুতি, যদিও শিল্পতত্ত্ব ও সৌন্দর্যতত্ত্ব পৃথক বস্তু। শিল্পী যে শিল্প গড়েন তাতে কাঙ্ক্ষিত মাত্রা দিতে সুন্দরের সৃজন অনিবার্য। সেই শিল্পকে আমরা যতভাবে দেখতে চাই, তারই একটা পর্যায়ে একে ‘সুন্দর’ বলে আখ্যা দিয়ে রস উপভোগ করি। শিল্পসৃষ্টি থেকে রসাস্বাদন পর্যন্ত সৌন্দর্যতত্ত্বের রাজপথ। এই সূত্রেই আসে শিল্পের পর্যায়ক্রম, সৌন্দর্যবোধ এবং আনন্দের উপলব্ধির প্রসঙ্গ। শিল্প তার ভোক্তা, রসিককে সৌন্দর্যের আঙ্গিনায় নিয়ে যাবেন; এই যাওয়া-আসার জন্য তারও সৌন্দর্য সম্বন্ধে যথাযথ উপলব্ধি আয়ত্ত্বে থাকা চাই। সহৃদয় রসিক শিল্পভূক দর্শক-পাঠক-শ্রোতাকে আনন্দের উপলব্ধিতে সমর্থ হতে হবে। সৃজনপ্রক্রিয়া থেকে আনন্দলাভের পর্যায় অবধি এই পরিক্রমার ক্ষেত্রে মূল জিজ্ঞাস্য হল, মানব সম্প্রদায়ের অধিগত এক কুশলতার প্রকাশ যে শিল্পকর্ম, তার সঙ্গে মানুষের সহজাত ধারণায় যে ‘সুন্দর’ রয়েছে এই দু’য়ের মধ্যে সেতুবন্ধন কোন পথে হবে। তাতে সৌন্দর্যের স্বরূপ কী। সেই সুন্দরের ধারণাই গড়ে তোলে নান্দনিক দৃষ্টিভঙ্গি। যার অধিকারীই শিল্পবস্তুর উপভোগে ও মূল্যায়নে সমর্থ।
There are no reviews yet.