শিল্পের কলাকৌশলগত সমীকরণ ও নান্দনিক সূত্র প্রসঙ্গে বলতে হয়, শিল্পকর্মে গড়ে তুলতে হয় কলাকৌশলের সাহায্যে এবং তাকে চূড়ান্ত পর্যায়ে নান্দনিকতায় মণ্ডিত হতে হয়। আঙ্গিক-চেতনার সঙ্গে নন্দনচেতনার দ্বন্দ্ব-সমন্বয়ের সমীকরণ-সূত্র খুঁজতে হয় সময় এ সমাজের মধ্যে। তাই শিল্পকর্ম একদিন ছিল একঘাত বা দ্বিঘাত সমীকরণের মতো সহজ সরল, কিন্তু সভ্যতার জটিলতার সঙ্গে সঙ্গে শিল্পকর্মও জটিল হয়েছে, অদীক্ষিত ব্যক্তির কাছে তা এখন অন্তর কলন সমীকরণ বা সমাকলন সমীকরণের মতোই দুর্বোধ্য।
প্রতিটি সমীকরণের যেমন এক বা একাধিক বীজ থাকে, শিল্পকর্মেরও তেমনি একাধিক বীজ থাকে, শিল্পকর্মেরও তেমনি একাধিক সাধারণ বীজ রয়েছে : যেমন অর্থময় রূপবিন্যাস ও অন্বয়ী রসানুভূতি। রূপ শিল্পকর্মকে কাঠামো দেয় আর রস আবহ সংগীতের মতো তাতে ব্যাপ্ত হয়ে থাকে। নান্দনিক মূল্যায়ন হয় রূপ ও রস উভয়ের বিচারে এবং তারই সঙ্গে আসে সময় ও সমাজের প্রাসঙ্গিকতার কথা। এই স্থান কাল-ভেদের জন্যই পাশ্চাত্য শিল্পাদর্শ মূলত ভাবপ্রধান।
একদিক থেকে দেখলে, যে-কোনো শিল্পকর্মই আসলে শিল্পের উপমা, কিছু না কিছু পরিমানে প্রতীকী। যেমন বৌদ্ধ দর্শনের সারাৎসার নির্বাণদীপের উপমায় বা খ্রীষ্টধর্মের আদিতে থাকে একটি ভাববীজ, তা কলাকৌশলের জল হাওয়া রোদ লেগে বেড়ে ওঠে ও তাকে ঘিরে ব্যাপ্ত হয় একটি আবহ যার সামাজিক/ মনস্তাত্ত্বিক/দার্শনিক/নান্দনিক বিচার বা মূল্যায়ন করি আমরা।
এই বই উৎসের সেই বীজ অনুসন্ধান ও ওই চূড়ান্ত আবহ বিশ্লেষণের এক কলাকৌশলগত প্রয়াস।
There are no reviews yet.